logo

Chairperson’s Desk_bn


লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, অধ্যক্ষ

কেউ মেয়ে হয়ে জন্মায় না, দিনে দিনে মেয়ে হয়ে ওঠে। এই মেয়ে হয়ে ওঠার পর্বে তাঁর জীবন, তাঁর স্বপ্ন ও স্বপ্নভাঙা শোক, সবই একজন পুরুষের থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। সমাজ ও পরিবারতন্ত্র তাঁকে হাতেখড়ি দেয় এই অনিবার্য মেয়েলিপনায়।

তাঁকে শিখতে হয় কীভাবে কথা বলতে হবে, কীভাবে মাথা নীচু করে আপাদমস্তক ঢেকে পথ চলতে হবে, কীভাবে প্রত্যেক দিন একটু একটু করে এক না দেখা পুরুষের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে সেই লক্ষ্যে। আর এই পথেই সমাজের তৈরি করা ছাঁচে ভালো মেয়ে হয়ে ওঠার পরীক্ষা পাশ করতে করতে নিষ্ক্রিয় হয়ে ওঠে সেই মেয়ে।

অথচ নারী দিনে দিনে তার আগল ভাঙছে, নারী এখন রাষ্ট্রনেতা-লেখক-গবেষক-অধ্যাপক-চিকিৎসক-পাইলট-বিজ্ঞানী-আমলা-মন্ত্রী-শিল্পপতি, কী নয়। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে নারীর কোনও সহজাত অযোগ্যতা নেই, তার সমস্ত অযোগ্যতাই পরিস্থিতিগত।

তবু সত্য এই মেয়েরা আজও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, ভার্জিনিয়া উলফ তো সেই কোনকালে মেয়েদের নিজেদের একটা ঘরের দাবি করেছিলেন। অথচ আজও মেয়েরা প্রকৃতঅর্থেই গৃহহীন, ছেলেবেলায় বাবার ঘর, বিয়ের পরে স্বামীর ঘর আর শেষ বয়সে সন্তানের ঘর, এই-ই যেন তার অনিবার্য পরিণতি। সময় এসেছে তাঁর অধিকার ও আইনের সুরক্ষা সম্পর্কে জানার এবং তা জীবনে প্রয়োগ করার।

সময় এসেছে তাঁর ওপর সমস্ত খবরদারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। কিন্তু খালি হাতে তো আর লড়াই করা যায় না। যায় না প্রতিরোধ করাও। এর জন্য চাই অস্ত্র, যে অস্ত্রের আঘাতে সে তার ওপর ঘটে চলা এ যাবৎ সমস্ত অবিচার-অসম্মান-অপমান-লাঞ্ছনার বদলা নেবে। এই অস্ত্র হল শিক্ষা। এই অস্ত্র তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেয়েদের একঝাঁক সবুজ ওড়না যখন জয়পতাকার মতো নিশান উড়িয়ে যায় কিংবা পাহাড়ের উঁচু ঢাল বেয়ে এক ঝাঁক সাইকেল যখন নেমে আসে উপত্যকার পথে একরাশ মেয়ের খিলখিল হাসি নিয়ে, তখন পাহাড় আর লাল মাটি মিলে মিশে যায় সাইকেল ও সেতুতে, সেই সময়ই বোঝা যায় মেয়েরা এবার পৃথিবীর যাবতীয় উন্নয়নের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাদের আর দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। ক্রমশ এই কড়া নাড়ায় আরও অসংখ্য নারীর হাত মিলবে, এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সত্যতার অনন্ত যাত্রায় নারী প্রথম সারিতে প্রথম হয়ে উঠুক, এটাই আমাদের প্রার্থনা।

Jalasampad Bhawan,Ground Floor and 10th Floor,Block – DF, Sector – 1,Salt Lake City,Kolkata – 700091

Top